সরকারি ও বেসরকারি প্যারামেডিকেল পড়ার যোগ্যতা ও ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ২০২৪-২০২৫
প্যারামেডিকেল বলতে মেডিকেল সম্পর্কিত বিষয় গুলোকে বুঝায়। একটি রোগীর সঠিক চিকিৎসার জন্য তার রোগ নির্ণয় প্রয়োজন। রোগ থেকে দ্রুত সেরে উঠতে প্রয়োজন সেবা যত্নের। কখনো কখনো রোগীকে ফিজিওথেরাপি নিতে হয়। ওষুধের নিয়মাবলী রোগীকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতে হয়। ডাক্তারের উপদেশে এই কাজ গুলো যিনি বা যারা করে থাকে তারা হলেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। এক কথা বলতে গেলে মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা ডাক্তারের সহকারী হিসেবে চিকিৎসা পেশায় অবদান রাখে। একজন বৈধ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হতে হলে প্যারামেডিকেল কোর্স করতে হয়।
একটি উদাহরনের মাধ্যমে বিষয়টি সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়েছে। ধরুন রোগ নির্ণয়ের জন্য কোন রোগীকে ডাক্তার রক্ত পরীক্ষা করতে বলেছে। রক্ত পরীক্ষার জন্য রোগীকে ল্যাবে যেতে হবে। ল্যাবে যিনি এই রক্ত পরীক্ষা করবেন তাকে প্যাথলজিস্ট বা ল্যাব টেকনোলজিস্ট বলা হয়। সে রক্ত পরীক্ষা করে রক্তের রিপোর্ট তৈরি করে ডাক্তারকে রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে। আমাদের দেশে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই প্যারামেডিকেল কোর্স করে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে চাকরির সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে।
সরকারি ও বেসরকারি প্যারামেডিকেল পড়ার যোগ্যতা
বাংলাদেশে মোট ২৩ টি সরকারি হেলথ টেকনোলজি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোকে সরকারি IHT (Institute of health technology) বলে। IHT তে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এর ডিপ্লোমা কোর্স গুলো করানো হয়। ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএসসি কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট কোর্স গুলোর মধ্যে রয়েছে ল্যাব মেডিসিন, ফিজিওথেরাপি, ডেন্টাল, রেডিওলজি, নার্সিং ও ফার্মাসি।
MATS বা Medical Assistant Training School চার বছর মেয়াদি একটি ডিপ্লোমা কোর্স পরিচালনা করে। এই কোর্স শেষ করে ডিপ্লোমা চিকিৎসক হিসেবে সাধারণ রোগের চিকিৎসা করা যায়। উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ও বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
প্যারামেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার নিয়ম
MATS বা IHT তে ভর্তি হতে চাইলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জীববিজ্ঞান সহ নূন্যতম ২.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। ভর্তি পরীক্ষায় মোট ১০০ নম্বর থাকবে। এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হবে যেখানে বাংলা, ইংরেজি, গনিত, পদার্থ, রসায়ন, জীব বিজ্ঞান বিষয়ের প্রতিটিতে ১৫ করে মোট ৯০ নম্বর এবং বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে ১০ নম্বর থাকবে।
এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ ও ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনা করে মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে একই যোগ্যতা লাগবে।
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আরো দুটি প্যারামেডিকেল কোর্স চালু রয়েছে। কোর্স দুই হলো কমিউনিটি প্যারামেডিক (সিপি) এবং কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার (সিএইচডাব্লিউ)।
কমিউনিটি প্যারামেডিক ও সিএইচডাব্লিউ কোর্স
কমিউনিটি প্যারামেডিক বা সিপি দুই বছরের একটি প্যারামেডিকেল কোর্স। কোর্সটি বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল পরিচালনা করে। এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে এই প্যারামেডিকেল কোর্স দুটিতে ভর্তি হওয়া যায়। কোর্স সম্পন্ন করার পর রেজিস্টার্ড কমিউনিটি প্যারামেডিক হিসেবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা যাবে।
কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়োগের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। তবে বিভিন্ন বেসরকারী ক্লিনিকে বেশ চাহিদা রয়েছে। সূর্যের হাসি ক্লিনিক, মেরী স্টপ, গ্রামীন কল্যাণ ইত্যাদি প্রাইভেট ক্লিনিকে কমিউনিটি প্যারামেডিক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়। সিএইচডব্লিউ একটি ১ বছর মেয়াদি প্যারামেডিকেল কোর্স। স্টেট মেডিকেল অফ ফ্যাকাল্টি কোর্সটি পরিচালনা করে।
প্যারামেডিকেল পড়তে কত খরচ হয়?
সরকারিতে খরচ কম কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে খরচ তুলনামূলক অনেক বেশি। তাছাড়া প্রতিষ্ঠান ভেদে খরচ ভিন্ন হয়। ভর্তি ফি ৭০০ টাকা, হোস্টেল ফি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারিত হয়। ২ বছর মেয়াদি কমিউনিটি প্যারামেডিক কোর্স করতে ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। ১ বছর মেয়াদি সিএইচডাব্লিউ কোর্স করতে ২৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
প্যারামেডিকেল পাশ করার পর চাকরি ক্ষেত্রে বেতন
প্যারামেডিকেল পাশ করার পর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা যায়। শুরুতে বেতন ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মতো বেতন পাওয়া যায়। কাজের দক্ষতার উপর নির্ভর করে পরবর্তীতে বেতন বাড়তে পারে। DMF, CP বা CHW কোর্স করে অনেকেই গ্রাম গঞ্জে ৫০ থেকে ১০০ টাকা ভিজিট নিয়ে রোগীদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন। অনেকে ফার্মাসিস্ট ওষুধের দোকান বা ফার্মেসি দিয়ে মাসে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত আয় করছে। তাই প্যারামেডিক্সদের মাসিক আয় সম্পর্কে নির্ধারিত করে বলা সম্ভব নয়। একজন প্যারামেডিক্স মাসে ১৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত আয় করতে পারে।