বাস্তুসংস্থান এর সংজ্ঞা, উপাদান ও উদাহরন।

কোন স্থানের পরিবেশের উপাদান গুলোকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: ১.জীব সম্প্রদায় ২. জড় পরিবেশ। বেঁচে থাকার জন্য জীব সম্প্রদায় ও পরিবেশ উভয়ের মধ্যে এটা নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়। পরিবেশের এই জীব সম্প্রদায় ও জড় বস্তুর মাঝের এই আন্তসম্পর্ক হলো বাস্তুসংস্থান। এই বিষয়ে চর্চাকে বলা হয় ইকোলজি বা বাস্তুবিদ্যা।

সংজ্ঞা: বাস্তু তন্ত্র বা বাস্তুসংস্থান: কোন পরিবেশের জীব সম্প্রদায় তাদের নিজেদের মধ্যে এবং সেখানকার অজৈব পরিবেশের সাথে মিথস্ক্রিয়ার ফলে একটা সুস্থিত তন্ত্র গঠিত হয়। যে ক্রিয়া পদ্ধতিতে এই সুস্থিত তন্ত্র গঠিত হয় তাকে বাস্তু তন্ত্র বলে (বাস্তুবিদ ওডাম)।

বাস্তু তন্ত্রের উপাদান

একটি বাস্তু তন্ত্রে প্রধানত জীব ও অজীব এই দুই ধরনের উপাদান থাকে।

অজীব উপাদান: অজীব উপাদান বলতে প্রাণহীন সকল উপাদান কে বোঝায়। তাই আমরা বলতে পারি কোন কোন বাস্তু তন্ত্রের সকল প্রাণহীন উপাদানকে ঐ বাস্তুতন্ত্রের অজীব উপাদান বলে। অজীব উপাদান গুলোকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। জৈব উপাদান এবং অজৈব উপাদান (ভৌত উপাদান)।

অজৈব উপাদান: কোন   পরিবেশে বা বাস্তুতন্ত্রের যে সকল উপাদান জৈবিক ক্রিয়ার কারনে সৃষ্ট হয় না এবং উক্ত বাস্তুতন্ত্রের জীবসমূহের উপর প্রভাব ফেলে তাদেরকে ঐ বাস্তুতন্ত্রের অজৈব উপাদান বলা হয়। যেমন: মাটি, পানি, বায়ু, আলো, তাপ ইত্যাদি। কোন পরিবেশের অজৈব উপাদান সেখানকার বাস্তুতন্ত্রের কার্যপ্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে।

জৈব উপাদান: যে সকল উপাদান কোন জীব থেকে উদ্ভূত হয় তাকে জৈব উপাদান বলে। জীবের মৃত দেহ পচনের মাধ্যমে জৈব উপাদানে পরিণত হয়।

বাস্তুসংস্থান এর সংজ্ঞা, উপাদান ও উদাহরণ।

সজীব উপাদান (উদ্ভিদ ও প্রাণী): সব ধরনের জীব সম্প্রদায় সজীব উপাদানের অন্তর্ভুক্ত। সজীব উপাদানকে উৎপাদক, খাদক ও বিয়োজক এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

উৎপাদক: বাস্তুতন্ত্রে যারা নিজের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে পারে তারাই হলো উৎপাদক। একমাত্র সবুজ উদ্ভিদ সূর্যালোক ব্যবহার করে কার্বন ডাই অক্সাইড ও পানির সাহায্য সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে। জলজ বাস্তুতন্ত্রে শৈবাল ও ক্লোরোফিল যুক্ত সব ধরনের উদ্ভিদ উৎপাদকের অন্তর্ভুক্ত।
খাদক: এরা খাদ্যের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উৎপাদকের উপর নির্ভরশীল। একটি বাস্তুতন্ত্রে তিন শ্রেণীর খাদক থাকে। এর মধ্যে প্রথম স্তরের খাদক খাদ্যের জন্য সরাসরি উৎপাদক তথা উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। সকল তৃণভোজী প্রাণী প্রথম স্তরের খাদকের অন্তর্ভুক্ত। যেমন: ঘাসফড়িং, গরু, ছাগল,ভেড়া, মহিষ, হরিণ ইত্যাদি।

দ্বিতীয় স্তরের খাদক গুলো এই প্রথম স্তরের খাদক তথা তৃণভোজী প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে। তাই এরা মাংসাশী প্রাণী যেমন: ব্যাঙ, নেকড়ে, বাঘ, সিংহ , কচ্ছপ ইত্যাদি। দ্বিতীয় স্তরের খাদক গুলোকে গৌণ খাদক বলা হয়।

তৃতীয় স্তরের খাদক, এদের সর্বোচ্চ স্তরের খাদক বলা হয়। এরা দ্বিতীয় স্তরের খাদককে খাবার হিসেবে গ্রহণ করুন। কোন প্রাণী যখন তৃণভোজী হয় তখন সে প্রথম স্তরের খাদক। আবার এই প্রাণী যখন প্রথম স্তরের খাদক থেকে খাবার গ্রহণ করে তখন দ্বিতীয় স্তরের খাদক হিসেবে গণ্য হবে। মানুষ ভাত, রুটি, ফলমূল অর্থাৎ উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত খাবার খাওয়ার কারণে প্রথম স্তরের খাদক বলা যায়। অন্যদিকে দুধ, ডিম, মাছ, মাংস খাওয়ার কারণে দ্বিতীয় স্তরের খাদকও বলা যায়। কোন প্রাণী একই সাথে বিভিন্ন স্তরের খাদক হিসেবে গণ্য হতে পারে।

বিয়োজক: বিভিন্ন ধরনের অনুজীব (ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদি) জীবের মৃতদেহ পচতে সাহায্য করে। বিয়োজক মৃতদেহ ডিকম্পোজ করে জৈব ও অজৈব পদার্থে পরিবর্তিত করে। বিয়োজক জটিল জৈব পদার্থ গুলোকে সরল জৈব পদার্থে পরিণত করে যা উৎপাদক পুষ্টি হিসেবে গ্রহণ করতে পারে।

বাস্তু তন্ত্রের উদাহরণ

একটি বাস্তুতন্ত্রে ছোট ছোট ঘাস উৎপাদক। সূর্যালোকের উপস্থিতিতে এরা নিজের খাদ্য নিজেরাই তৈরি করে। একটি পুকুরের বাস্তুসংস্থান জলজ বাস্তু সংস্থানের একটি উদাহরণ।

কচুরিপানা, শাপলা, প্লাঙ্কটন, শৈবাল, বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ ইত্যাদি হলো উৎপাদক। বিভিন্ন ছোট পোকামাকড়, জুপ্লাংকটন, মশার শুককীট, রুই মাছ ইত্যাদি যারা এই জলজ উদ্ভিদ খেয়ে বেঁচে থাকে তারা প্রথম শ্রেণীর খাদক।

একটি পুকুরের বাস্তুসংস্থান

প্রথম শ্রেণীর খাদককে পুকুরের অন্য যে সকল প্রাণী খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে তারা দ্বিতীয় শ্রেণীর খাদক। ছোট ছোট মাছ, ব্যাঙ, জলজ পতঙ্গ ইত্যাদি। তৃতীয় বা সর্বোচ্চ স্তরের খাদকের মধ্যে রয়েছে বোয়াল, শোল, অন্যান্য রাক্ষুসে মাছ, মাছরাঙ্গা, বক ইত্যাদি প্রাণী। এরা দ্বিতীয় স্তরের খাদক খেয়ে বেঁচে থাকে।

পুকুরে  বসবাসরত জীবিত বা মৃত প্রাণী পচতে সাহায্য করে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক, তাই এরা বিয়োজক। মৃতদেহ পচনের ফলে উৎপন্ন জৈব ও অজৈব পদার্থ তৈরি হয় যা উৎপাদক ব্যবহার করে। ভৌত উপাদানের মধ্যে রয়েছে সূর্যালোক, তাপমাত্রা, মাটি, পানি, বায়ু প্রবাহ ইত্যাদি। 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url