সান্দ্রতা ও সান্দ্রতা গুণাঙ্ক

কোন প্রবাহী পদার্থ প্রবাহিত হওয়ার সময় এটি বাধাগ্রস্ত হয়। পদার্থটি যতটুকু বাধাগ্রস্ত হয় সেটাই হলো উক্ত পদার্থের সান্দ্রতা। জেনে রাখা ভালো, প্রবাহী পদার্থ বলতে বোঝায় যে সকল পদার্থ বলে প্রবাহিত হতে পারে। সান্দ্রতা বলতে মূলত প্রবাহের বিরোধীতা বোঝায়। আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য সান্দ্রতাকে দুটি কঠিন পদার্থের মধ্যবর্তী ঘর্ষণের সাথে বিবেচনা করা যেতে পারে।

আমরা জানি তরল ও গ্যাসীয় পদার্থের নির্দিষ্ট কোন আকার নেই আর তার কারণ হলো এদের আন্তঃআবিক শক্তি খুব কম। একটি অনুভূমিক তলে প্রবাহিত কোন প্রবাহী কতগুলো স্তরে বিভক্ত রয়েছে বলে কল্পনা করি। এখন তল সংলগ্ন স্তরটি তলের সাপেক্ষে স্থির থাকে কিন্তু অন্যান্য স্তরগুলো গতিশীল। সবগুলো স্তরের আপেক্ষিক বেগ সমান হয় না। এটা নির্ভর করে তল থেকে স্তরের দুরত্বের উপর। তল থেকে প্রবাহী স্তরের দূরত্ব বেশি হলে তার আপেক্ষিক বেগ বেশি হয়। প্রবাহ কালে কোন প্রবাহীর সন্নিহিত দুটি স্তরের মধ্যে ঘর্ষণের ফলে আপেক্ষিক গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়।

সান্দ্রতা কাকে বলে?  সান্দ্রতা গুণাঙ্ক ও সহগ

সংজ্ঞা: যে ধর্মের জন্য কোন প্রবাহী প্রবাহ কালে তার বিভিন্ন স্তরের আপেক্ষিক গতি বাধাপ্রাপ্ত হয় হয় তাকে উক্ত প্রবাহীর সান্দ্রতা বলে।

এটি মূলত প্রবাহীর ঘনত্বের উপর নির্ভর করে। যেমন মধুর ঘনত্ব পানির চাইতে বেশি তাই মধুর সান্দ্রতা বেশি।

ঘর্ষণ বল ও সান্দ্র বলের মধ্যে পার্থক্য

পাশাপাশি অবস্থিত দুটি তরল স্তরের আপেক্ষিক গতিকে বাধা দানকারী বলকে সান্দ্র বল বলে। এখন আমরা ঘর্ষণ ও সান্দ্র বলের মধ্যে সাদৃশ্য ও পার্থক্য সম্পর্কে জানবো। ঘর্ষণ দুটি কঠিন পদার্থ একটির উপর দিয়ে আরেকটি চলার সময় তাদের আপেক্ষিক গতিতে বাধার সৃষ্টি করে। সান্দ্রতা ঠিক একইভাবে প্রবাহীর দুটি স্তরের আপেক্ষিক গতিকে বাধা দিয়ে গতি রোধ করার চেষ্টা করে। প্রবাহী যখন গতিশীল হবে তখনই কেবল সান্দ্র বল কাজ করবে। স্থির অবস্থায় কোন প্রবাহীর সান্দ্র বল থাকে না।


সান্দ্র বল ও ঘর্ষণ বলের পার্থক্য হল সান্দ্র বল কোন প্রবাহীর সন্নিহিত স্তর দুটির ক্ষেত্রফলের উপর নির্ভর করে। কিন্তু ঘর্ষণ বলের ক্ষেত্রে এর মান পদার্থ দুটির স্পর্শতলের ক্ষেত্রফলের উপর নির্ভরশীল নয়। স্থির তল হতে প্রবাহীর সন্নিহিত স্তর দুটির দুরত্ব ও গতিশীলতার উপর সান্দ্র বল নির্ভর করে।

নিউটনের সান্দ্রতার সূত্র

মনে করি একটি কঠিন সমতলের উপর দিয়ে কোন তরল কতগুলো স্তরে প্রবাহিত হচ্ছে। এই স্তর গুলোর মধ্যে দুটি সমান্তরাল স্তরকে বিবেচনায় নেয়া যাক যাদের মধ্যবর্তী দূরত্ব dy এবং প্রতিটি স্তরের ক্ষেত্রফল A এবং স্তর দুটি যথাক্রমে v ও dv বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। এখানে দূরত্বের সাপেক্ষে বেগের পরিবর্তনের হার অর্থাৎ dv/dy কে বেগের নতি বলে।

বেগের নতি

নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোন প্রবাহীর সান্দ্র বল সন্নিহিত স্তর দুটির ক্ষেত্রফল (A) এবং এদের বেগের নতি মাত্রার (dv/dy) সমানুপাতিক। এটাই হলো নিউটনের সান্দ্রতা সূত্র।


এখানে, η (ইটা) একটি ধ্রুবক। একে প্রবাহীর সান্দ্রতা গুণাঙ্ক বা সান্দ্রতা সহগ বলে। এর মান তাপমাত্রা ও প্রবাহীর প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। এখানে বেগের নতি মাত্রাকে এক একক ও ক্ষেত্রফলকে এক একক ধরে অর্থাৎ A=1 এবং (dv/dy)=1 হলে,
F=η অর্থাৎ η=F হয়।

এখান থেকে সান্দ্রতা গুণাঙ্কের সংজ্ঞা দেওয়া যায় হয়েছে।

সংজ্ঞা: নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় একক বেগের নতি মাত্রা যুক্ত কোন প্রবাহীর সন্নিহিত দুটি স্তরের প্রতি একক ক্ষেত্রফলে যে সান্দ্র বল ক্রিয়া তাকে ঐ তাপমাত্রায় উক্ত প্রবাহীর সান্দ্রতা গুণাঙ্ক বলে।

সান্দ্রতা গুণাঙ্ক এর একক ও মাত্রা



SI বা আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে সান্দ্রতা গুণাঙ্ক বা সান্দ্রতাঙ্কের একক হল Pas . তাছাড়া এর আরেকটি একটি একক হলো পয়েস (poise) যা বিজ্ঞানী পয়সুলীর নামানুসারে করা হয়েছে। 1Pas=10 poise হয়।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url