স্কেলার রাশি ও ভেক্টর রাশির সংজ্ঞা, পার্থক্য ও উদাহরণ।
ভেক্টর রাশি ও স্কেলার রাশি সম্পর্কিত খুঁটিনাটি বিষয়গুলো এই আর্টিকেল তুলে ধরা হয়েছে। নবম- দশম, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক হবে বলে আশা করছি। ভৌত জগতে পরিমাপযোগ্য সবকিছুই রাশি। যেমন: দৈর্ঘ্য, ভর, ওজন, সময় ইত্যাদি। মান ও দিকের ওপর ভিত্তি করে সকল রাশিকে ভেক্টর রাশি ও স্কেলার রাশি দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। স্কেলার রাশিকে শুধু মান দিয়ে প্রকাশ করা যায়।
সংজ্ঞা- ভেক্টর রাশি: যে সকল রাশিকে শুধু মান দিয়ে প্রকাশ করা যায় না, মান ওদিক উভয়ের প্রয়োজন হয় তাদের ভেক্টর রাশি বলা হয়। যেমন: ওজন, ত্বরণ, মন্দন, বেগ ইত্যাদি।
কোন বস্তুকে পৃথিবী তার কেন্দ্রের দিকে যে বলে আকর্ষণ করে সেটা হচ্ছে ঐ বস্ত্র ওজন। ওজনকে প্রকাশ করতে হলে মানের পাশাপাশি দিক লাগবে। বস্তুটাকে পৃথিবী আকর্ষণ করছে তার নিজের দিকে। ওজনের দিক হবে পৃথিবী যে দিকে বস্তুকে আকর্ষণ করছে সে দিক অর্থাৎ পৃথিবী অভিমুখে। একইভাবে একটি বস্তুকে নির্দিষ্ট দিকে ধাক্কা অথবা টান দিলে তার অবস্থানের পরিবর্তন হবে। তাই ধাক্কা ,টান বা বল একটি ভেক্টর রাশি।
সংজ্ঞা- স্কেলার রাশি: শুধু মান দিয়ে প্রকাশ করা যায় এমন সব রাশিকে স্কেলার রাশি বলে। যেমন: দূরত্ব, ভর, সময় ইত্যাদি।
সময়ের কোন নির্দিষ্ট দিক নেই তাই এটি স্কেলার রাশি। ভর হচ্ছে কোন বস্তুতে বিদ্যমান পদার্থের মোট পরিমান। তাই ভর প্রকাশের জন্য কোন দিকের প্রয়োজন নেই তাই ভর স্কেলার রাশি।
কতিপয় ভেক্টরের সংজ্ঞা ও উদাহরণ
একক ভেক্টরের সংজ্ঞা: এক একক মানের কোন ভেক্টরকে একক ভেক্টর বলা হয়। কোন অক্ষরের উপর টুপি (^) চিহ্ন বসিয়ে একক ভেক্টর প্রকাশ করা হয়। মান শূন্য নয় এমন ভেক্টরকে এর মান দিয়ে ভাগ করলে এই ভেক্টরের সমান্তরালে একটি একক ভেক্টর পাওয়া যাবে।
আয়ত একক ভেক্টরের সংজ্ঞা: ত্রিমাত্রিক কার্তেসীয় স্থানাঙ্কে পরস্পরের সাথে লম্বভাবে তিনটি ধনাত্মক অক্ষ অবস্থান করে। এই অক্ষত্রয় বরাবর তিনটি একক ভেক্টর বিবেচনা করা হয়, এদের আয়ত একক ভেক্টর বলে।
ত্রিমাত্রিক কার্তেসীয় স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় X,Y ও Z হলো তিনটি ধনাত্মক অক্ষ। X অক্ষ বরাবর একক ভেক্টর i^, Y অক্ষ বরাবর একক ভেক্টর j^, Z অক্ষ বরাবর একক ভেক্টর k^ বিবেচনা করা হয়। এই ভেক্টর তিনটি হচ্ছে আয়ত একক ভেক্টর। এই ভেক্টর তিনটি হচ্ছে আয়ত একক ভেক্টর।
অবস্থান ভেক্টরের সংজ্ঞা: যে ভেক্টরের সাহায্যে একই সমতলে প্রসঙ্গ কাঠামোর মূল বিন্দু বা একটি নির্দিষ্ট বিন্দুর সাপেক্ষে অন্য কোন বিন্দুর অবস্থান বের করা হয় তাকে অবস্থান ভেক্টর বলে।
O প্রসঙ্গ কাঠামোর মূল বিন্দু হলে, O বিন্দুর সাপেক্ষে P বিন্দুর অবস্থান নির্ণয় করতে OP ভেক্টর ব্যবহার করা হয়। এখানে, OP হলো অবস্থান ভেক্টর। উল্লেখযোগ্য বিষয় ভেক্টর রাশি বোঝাতে তীর চিহ্ন বসাতে হয়।
বিপ্রতীপ ভেক্টরের সংজ্ঞা: দুটি সমান্তরাল ভেক্টর বিপ্রতীপ হয় যখন একটি ভেক্টরের মান অপর ভেক্টরের মানের বিপ্রতীপ হয়।
লব্ধি ভেক্টরের সংজ্ঞা: দুটি বা তার চেয়ে বেশি ভেক্টরের সমন্বয়ের ফলে বা যোগ করলে নতুন যে ভেক্টরটি পাওয়া যায় তাকে লব্ধি ভেক্টর বলে।
নাল ভেক্টর: যদি কোন ভেক্টরের মান শূন্য হয় এবং এর কোন দিক না থাকে তখন তাকে শূন্য ভেক্টর বা নাল ভেক্টর বলে।
সীমাবদ্ধ ভেক্টরের সংজ্ঞা: যখন কোন ভেক্টরের পাদবিন্দু নির্দিষ্ট কোন বিন্দুতে স্থাপন করতে হয় অর্থাৎ পাদবিন্দু কোন বিন্দুতে স্থাপন করতে হবে সেটা নির্দিষ্ট করা থাকে তাকে সীমাবদ্ধ ভেক্টর বলে। সীমাবদ্ধ ভেক্টরের ক্ষেত্রে পাদবিন্দু ইচ্ছেমতো স্থাপন করা যায় না।
সঠিক ভেক্টরের সংজ্ঞা: নাল ভেক্টর ব্যাতিত সকল ভেক্টরকে সঠিক ভেক্টর বলে। অর্থাৎ কোন ভেক্টরের মান শূন্য না হলে তাকে সঠিক ভেক্টর বলে।
সদৃশ ভেক্টরের সংজ্ঞা: দুটি বা তার চেয়ে বেশি সমজাতীয় ভেক্টর একই দিকে ক্রিয়াশীল হলে তাদের পরস্পরের সমান্তরাল ভেক্টর বা সদৃশ ভেক্টর বলে।
বিসদৃশ ভেক্টরের সংজ্ঞা: পরস্পরের বিপরীত দিকে ক্রিয়া করে এমন দুটি সমজাতীয় ভেক্টরকে বিসদৃশ ভেক্টর বলে। ভেক্টরদ্বয়ের এটিকে ধনাত্মক ধরলে অপরটি ঋণাত্মক হয় অর্থাৎ একটিকে অপরটির ঋণাত্মক ভেক্টর বলা হয়।
তল ভেক্টরের সংজ্ঞা: কোন সমতল পৃষ্ঠে অভিলম্ব অঙ্কন করা হলে উক্ত অভিলম্বকে ঐ তলের তল ভেক্টর বলা হয় যার মান উক্ত তলের ক্ষেত্রফলের সমান।
স্কেলার রাশি ও ভেক্টর রাশির মধ্যে পার্থক্য
স্কেলার রাশি ও ভেক্টর রাশির মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। পার্থক্য সমূহ হলো:
ভেক্টর | স্কেলার |
---|---|
মান ও দিক দুটোই আছে। | মান আছে কিন্তু দিক নেই। |
প্রকাশ করার জন্য মান ও দিক দুটোই দরকার। | শুধু মান দিয়ে প্রকাশ করা যায় দিকের প্রয়োজন নেই। |
উদাহরণ: ওজন, অভিকর্ষজ বল, বল, সরণ, ত্বরণ ইত্যাদি। | উদাহরণ: সময়, দ্রুতি, ভর ইত্যাদি। |
সাধারণ নিয়ম অনুসারে যোগ, বিয়োগ, গুণ ইত্যাদি করা যায় না। ভেক্টর বীজগণিত বা ভেক্টর জ্যামিতি অনুসরণ করতে হয়। | এগুলো সাধারণ নিয়ম অনুসারে করা যায়। |
দুটি ভেক্টর রাশি গুণ করা হলে এদের কোনোটির মান শূন্য না হলেও গুণফল শূন্য হতে পারে। | দুটি স্কেলার রাশি গুণ করলে গুণফল শূন্য হবে যদি অন্তত একটি মান শূন্য হয়। |
কোন ভেক্টর রাশিকে অন্য কোন ভেক্টর রাশি দিয়ে ভাগ করা যায় না। | স্কেলার রাশিকে যেকোনো স্কেলার রাশি দিয়ে ভাগ করা যায়। |
ভেক্টর রাশি বহুমাত্রিক। | স্কেলার রাশি কেবল একমাত্রিক। |
ভেক্টর রাশি ও স্কেলার রাশি সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকে আমাদের জানাবেন, ধন্যবাদ।